হবিগঞ্জ জেলা চায়ের বাগান, হাওর ও বনাঞ্চলের জন্যে অতি পরিচিত। হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অনুসারী সৈয়দ নাছির উদ্দিন (রঃ) এর পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত এই জেলা খোয়াই, করাঙ্গী সুতাং, বিজনা, রত্না প্রভৃতি নদী বিধৌত প্রাচীন জনপদ। জেলার পূর্বে মৌলভীবাজার ও সিলেট জেলা এবং পশ্চিমে ব্রাহ্মনবাড়িয়া ও কিশোরগঞ্জ জেলা, উত্তরে সুনামগঞ্জ জেলা, দক্ষিণে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। হবিগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো; কালেঙ্গা অভয়ারন্য, রেমা কালেঙ্গা সংরক্ষিত বনাঞ্চল, রাবার বাগান, বিতঙ্গল আখড় বিবিয়ানা গ্যাস ফিল্ড ইত্যাদি।
মৌলভীবাজার জেলা বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বঞ্চলের সিলেট বিভাগের অন্তর্গত মন্ডিত জেলা। পর্যটন শিল্পের জন্যে গুরুত্বপূর্ন এই জেলা বাংলাদেশের সভ্যতা, ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে অবদান অনেক। বৈচিত্রময় চারপাশে, দৃষ্টি নন্দন চা বাগান, আদিবাসীদের সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আপন মহিমায় এই জেলা অন্যে জায়গা থেকে ভিন্ন।
মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে অনেক পর্যটক আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব সম্পন্ন জাগায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দর্শনীয় স্থান গুলোর রয়েছে, বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধ, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, হযরত শাহ মোস্তফা (র:) এর মাজার শরীফ, ৯২টি চা বাগান, চা গবেষণা ইনষ্টিটিউট, পৃথিমপাশা নবাববাড়ী, মনু ব্যারেজ, মাধবপুর চা-বাগান লেক, মনিপুরী পল্লী, কমলা/লেবু/আনারস বাগান, পাহাড়, টিলা, হাওড় ও বিলের সমাহার।
সুনামগঞ্জের ইতিহাস অতি প্রাচীন। অসংখ্য কিংবদন্তী এবং ঐতিহাসিক ঘটনাবলী ও তথ্যাবলীতে সমৃদ্ধ। প্রাচীন ইতিহাস থেকে অনুমান করা হয়, সুনামগঞ্জ জেলার সমগ্র অঞ্চল এককালে আসামের কামরূপ বা প্রাগজ্যোতিষপুর রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। সুনামগঞ্জের লাউড় পরগনায় এখনো প্রবাদ হিসেবে কথিত আছে লাউড় পাহাড়ের উপরই কামরূপের রাজা ‘ভগদত্তের’ রাজধানী ছিল। এ ভগদত্ত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে কৌরবদের পক্ষে যুদ্ধ করেছিলেন বলেও কিংবদন্তী রয়েছে। টাংগাইলের মধুপুর বনেও উক্ত রাজবাড়ীর চিহ্ন ছিল বলে জানা যায়। ঐতিহাসিকদের মতে, এ ভগদত্ত ও মহাভারতের ভগদত্ত এক ব্যক্তি নন, বরং কথিত ভগদত্ত মহাভারতের অনেক পরের কালের মানুষ। এটাই সত্য। কারণ কিংবদন্তী ও ইতিহাস যেখানে মিল হবে না সেখানে ইতিহাস ভিত্তি ধরাই বিধেয়।
বৃহত্তর সিলেট সুদূর অতীতে তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্বাধীন রাজ্যে বিভক্ত ছিল। এ রাজ্যগুলো হচ্ছে লাউড়, গৌড় ও জয়ন্তিয়া। অনুমান করা হয়, এ লাউড় রাজ্যের সীমানা বর্তমান সমগ্র সুনামগঞ্জ জেলা ও ময়মনসিংহ জেলা এবং হবিগঞ্জ জেলার কিয়দংশ নিয়ে গঠিত ছিল। এ রাজ্যের রাজধানী ছিল লাউড়। সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর থানার উত্তর বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া নামে পরিচিতি গ্রামে লাউড়ের রাজা বিজয় সিংহের বাসস্থানের ধ্বংসাবশেষের চিহ্ন এখনো বিদ্যমান। স্থানীয়ভাবে এটি হাবেলী (হাওলী) নামে পরিচিতি।
সিলেট জেলাঃ
বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল সিলেট। এটি সিলেট বিভাগের অধিক্ষেত্রভুক্ত একটি জেলা। উপজেলার সংখ্যানুসারে সিলেট বাংলাদেশের একটি শ্রেণীভুক্ত জেলা। সিলেট বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ জেলা দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী ও বিশ্বের দ্বিতীয় লন্ডন হিসেবে খ্যাত। জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, জাফলং এর মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি পাথরের স্তূপ, পাথরের বিছানাখ্যাত বিছনাকান্দি, রাতারগুল জলাবন পর্যটকদের টেনে আনে বার বার।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর সিলেট জেলার বিপুল সংখ্যক লোক পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অভিবাসন গ্রহণ করেছে। তারা প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখে। সিলেটের পাথর, বালির গুণগতমান দেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। জেলার প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ রয়েছে যা সারা দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে এ জেলার ভূমিকা অপরিসীম। মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম,এ,জি ওসমানী এ জেলারই কৃতী সন্তান।
সিলেট জেলার প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা হলো সিলেট শহর । ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলেই সিলেট দ্রুত বিকাশ লাভ করেছে। সিলেট পৌরসভা সৃষ্টি ১৮৭৮ খ্রিষ্টাব্দে । ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জুন এক মারাত্মক ভূমিকম্প গোটা সিলেট শহরটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে ফেলে। পরবর্তী কালে ধ্বংসস্ত্তপের ওপর গড়ে উঠে ইউরোপীয় ধাঁচের আরও সুন্দর ও আধুনিক শহর। ১৮৯০ এর দশকের শেষ ভাগে বেশ কিছু রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়। ১৯১২-১৫ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের একটি শাখা সিলেটের সাথে সংযুক্ত হলে দেশের অন্যান্য অংশের সাথে সিলেটের বিচ্ছিন্নতার প্রকৃত অবসান ঘটে।
চা শিল্পের কারণে বিশ শতকের প্রথম দিকে সিলেট শহরের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৫০ ও ১৯৬০ দশকে প্রবাসী সিলেটিদের কল্যাণে সিলেটের শহর দ্রুত নগরায়ণ ঘটতে থাকে এই নগরায়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রয়েছে।